টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা যা আপনার কল্পনার বাহিরে। কালোজিরাকে আয়ুর্বেদিক ভাষায় সর্ব রোগের মহৌষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । কালোজিরা মানুষের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হৃদপিন্ডের কোন দুরারোগ্য রোগ থাকলে তা নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। রক্ত চলাচল সচল রাখে ।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
পোস্ট সূচীপত্র ঃ টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- কালোজিরা খাওয়ার /ব্যবহারের নিয়ম
- কালোজিরার পুষ্টি উপাদান
- প্রতিদিন কি কালোজিরা খাওয়া যাবে
- ওজন নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
- কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
- কালোজিরা গিলে খাওয়ার উপকারিতা
- কালিজিরা সম্পর্কে গবেষকদের মতামত :
- কালোজিরা যে সমস্ত রোগের উপশম করে :
- লেখকের মতামত
টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
- টানা সাত দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা আপনি আপনার শরীরের মধ্যে অনুভব করতে পারবেন। আপনি এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে। যেমন-
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
- সর্দি কাশি দূর করে ।
- এলার্জি হাঁপানি থাকলে দূর করে ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- চুল পড়া রোধ করে।
- কিডনি সমস্যা দূর করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- মাথাব্যথা নিরাময় করে।
- চোখে ঝাপসা দেখলে তা দূর করে।
- প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে।
- হাটু ব্যথা নিরাময় করে ।
কালোজিরা খাওয়ার/ ব্যবহারের নিয়ম
হাদিসে কালোজিরাকে মৃত্যুর ব্যতীত অন্য সব রোগের মহৌষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সঠিক নিয়মে টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা বহুমুখী । নিম্নে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে কয়েকটি পদ্ধতির আলোচনা করা হলো
১নং পদ্ধতি : প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক চা চামচ মধু ও তার সাথে সামান্য কালিজিরার গুড়া মিশিয়ে খেলে সর্দিও কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।২ নং পদ্ধতি : ঠান্ডা লাগার ক্ষেত্রে কালোজিরা খাওয়া অনেক উপকারী। এটা খাওয়ার নিয়ম হলো সামান্য গরম পানির সাথে অথবা লাল চায়ের সাথে একটু লিকার দিয়ে কালিজিরা সেবন করলে ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।৩ নং পদ্ধতি : সকল বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে কালোজিরা সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে এর সাথে সামান্য রসুন দিয়ে ভালো করে গরম করে নিতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পরে পায়ের তালু এবং বুকে মেসেজ করা যায়, তাহলে বুকের ভিতরে জমে থাকা কফ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।৪ নং পদ্ধতি : এক চা চামচ মধু তার সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা কাশি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।কালোজিরার পুষ্টি উপাদান
কালোজিরাতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি ও উপকারী উপাদান। কালোজিরাতে আছে ফসফেট ,লৌহ ও ফসফেট। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য কেরোটিন। প্রতি গ্রাম কালোজিরা পুষ্টি উপাদান হলউপাদান পরিমাণ প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি-১ ১৫মাইক্রোগ্রাম নিয়াসিন ৫৭মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিইয়াম ১.৮৫মাইক্রোগ্রাম আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম জিঙ্ক ৬০মাইক্রোগ্রাম ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম ফলাসিন ৬১০ আইউ
প্রতিদিন কি কালোজিরা খাওয়া যাবে
সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আপনি প্রতিদিন কালোজিরা সামান্য পরিমাণে খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যদিও কালোজিরা অনেক দেহের জন্য উপকারী। মাত্রাতিরিক্ত খেলে আপনি নিম্নোক্ত সমস্যায় পড়তে পারেন-যাদের পূর্বে থেকেই হজমের সমস্যা আছে, তারা অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন করলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অথবা তার বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। আবার অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে।প্রেগনেন্ট মহিলাদের অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন করা উচিত নয়। কারণ এতে তার অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়া মোটেই উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন করলে তাদের লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে তার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
কারো কারো ক্ষেত্রে প্রতিদিন কালোজিরা সেবন করলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই আমাদের সকলের উচিত হবে , অসুস্থ শরীরে কালোজিরা সেবনের পূর্বে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।ওজন নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
আধুনিক যুগের সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। তাই সবাই নিজেকে ফিট রাখার জন্য ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। আর ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কালোজিরার তুলনা হয় না। আপনি বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য কালোজিরা সেবন করতেপারেন।
গরম পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করা :
কালোজিরা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া অথবা কয়েকটা কালোজিরা দানাকে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খালি পেটে সেবন করলে দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।গরম চা অথবা গরম খাবারের সাথে :কালোজিরা গরম চা অথবা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
মধুর সাথে কালোজিরা সেবন করা :ওজনের নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম পরিচিত পদ্ধতি হলো কালোজিরা কে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করা।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার চাই আপনি কালোজিরা কে চিবিয়ে খান অথবা অন্য কোন প্রক্রিয়া রেখা নিম্নে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা বলা হলো- পুষ্টি শোষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে : কালোজিরা যদি আপনি চিবিয়ে খান তাহলে কালোজিরার থাইমোকুনোন নামক উপাদান শরীরের পুষ্টি শোষণে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- কালোজিরা চিবিয়ে খেলে এর স্বাদ ও ঝাঁঝালো ঘ্রাণ অনুভব করা যায়। যা দেহের হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে।
- কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হলো এটি লালার সঙ্গে মিশে পাচনতন্ত্রের হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে।
কালোজিরা গিলে খাওয়ার উপকারিতা :
আপনি যদি কালোজিরা গিলে খান তাহলে নিম্নোক্ত উপকারিতা পাবেন- কালোজিরা চিবিয়ে না খেয়ে আপনি গিলেও খেতে পারেন। এটা হচ্ছে একটা ঝামেলা বিহীন পদ্ধতি। বিশেষ করে যারা কালোজিরার স্বাদ এবং ঝাঁঝালো ঘ্রাণ নিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার সময় অসুবিধায় পড়েন তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি খুবই সহজ। কালোজিরা গিলে খাওয়ার আরেকটা সুবিধা হল শরীর এটাকে ধীরে ধীরে শোষণ করে থাকে। ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে । আরামদায়ক পদ্ধতি : বিশেষ করে যারা কালোজিরার ঝাঝ সহ্য করতে পারেন না , তারা সহজে এটি গিলে খেয়ে এই ঝামেলাটা এড়াতে পারেন।
কালিজিরা সম্পর্কে গবেষকদের মতামত :
কালোজিরা নিয়ে সেই প্রাচীন কাল থেকে গবেষনা হয়ে আসছে। বর্তমান যুগে কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে গবেষণা যেন শেষ নাই। টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা প্রমাণাতীত। নিম্নে কয়েকজন গবেষকের মতামত তুলে ধরা হলো -
- মিশরের কয়েকজন গবেষক ১৯৬০ সালের দিকে এটা নিশ্চিত হন যে , কালোজিরার ভেতর একটা উপাদান আছে যার নাম নাইজেলোন। এই নাইজেলনের কারণেই হাঁপানি রোগের উপশম হয়।
- জার্মানির কয়েকজন গবেষক মতামত ব্যক্ত করেন যে , যে কালোজিরাতে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি মাইক্রোটিক প্রভাব রয়েছে। যার ফলে এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে আর এন্টারফেরোন তৈরী বাড়িয়ে দেয়।
কালোজিরা যে সমস্ত রোগের উপশম করে :
- আমেরিকার গবেষকরা প্রথম কালোজিরার টিউমার বিরোধী প্রভাব সম্পর্কে মতামত দেন।
- কালোজিরা দেহের ক্যান্সার উৎপাদিনকারী ফ্রি রেডিকেল অপসারিত করতে সাহায্য করে।
- কালোজিরায় থাকা একটা উপাদান যার নাম থাইমোকুনিন যা পারকিনসন ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের শরীরে উৎপন্ন টকসিনের প্রভাব মুক্ত করার জন্য নিউরনের সুরক্ষায় কাজ করে।
- মেডিকেল সাইন্স মনিটর জার্নাল এর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় নিয়মিত কালোজিরা খেলে মৃগীরোগ ও শিশুদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকে কমায়।
- কালোজিরা খিচুনি বন্ধ করার উপাদান থাকে।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিরাময় করে।
- গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে , প্রতিদিন দুই গ্রাম কালোজিরা খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমায় ও ইনসুলিনের বাধা দূর করে এবং অগ্নাশয় এর বিটা কোষের কাজ বৃদ্ধি করে।
শেষকথাঃ টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা দ্রুত আপনার দৃষ্টি গোচর হবে । কিন্তু কালোজিরা শুরুতে একেবারে বেশি খাওয়া যাবে না । এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত বিশেষ করে যাদের কালোজিরা হজম হয় না তারা আস্তে আস্তে খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর এই কালোজিরা সেবন করাটা ইসলাম ধর্মমতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালোজিরাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য সকল রোগের ঔষধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এবং এর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে আমাদের সকলের উচিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
ভেনাসম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url