প্রতিদিন আপনি আমলকি কেন খাবেন /আমলকির উপকারিতা আপনি মিস করছেন না তো ?
প্রতিদিন আপনি আমলকি কেন খাবেন ? আমলকির উপকারিতা আপনি মিস করছেন না তো ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা অনেকেই জানি না । শুধু এতোটুকু জানি যে , আমলকি খাওয়ার উপকারিতা আছে । কিন্তু এর কতটুকু উপকারিতা আছে , তা জানলে আমরা সত্যিই আমলকি খাওয়া মিস করব না । আজকের এই আর্টিকেলে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা বা আমলকি খাওয়া মিস করলে আপনি কতটুকু স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।
আমলকি একটি ছোট, সবুজ এবং গোলাকার ফল । যা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এটি ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো দুরারোগ্য চিকিৎসায় এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই আর্টিকেলে আমলকির বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর দিক এবং এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ প্রতিদিন আপনি আমলকি কেন খাবেন ?
- প্রতিদিন আপনি আমলকি কেন খাবেন
- পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস
- আমলকি বেশি খাওয়ার অপকারিতা
- সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে কি হয়
- সর্তকতা
- আমলকি কি সুপার ফুড এর অন্তর্ভুক্ত
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার
- ত্বকে আমলকী ব্যবহারের নিয়ম
- একনজরে আমলকী যে সমস্ত রোগের জন্য উপকারী
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ
- আমলকির বিশেষত্ব
- মূল কথা
প্রতিদিন আপনি আমলকি কেন খাবেন
আমলকি একটি ছোট সবুজ এবং গোলাকার ফল । যা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া
যায়। আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং পুষ্টিগণের ভরপুর । নিম্নে আপনি
আমলকি কেন খাবেন বা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা কি তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
- আমলকি কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- সর্দি কাশির উপসর্গ থেকে মুক্তি দেয়।
- গাট হেলথ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- পাকস্থলীর পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ওরাল আলসার কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- মানসিক চাপ কমায়।
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- চুলের গোড়া মজবুত করে।
- হজম শক্তি উন্নত করে।
পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস
আমলকি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন ই
- এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং আয়রন ।
ভিটামিন সি-এর উচ্চ মাত্রা আমলকিকে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে গড়ে তোলে, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আমলকি বেশি খাওয়ার অপকারিতা
প্রকৃতির অপর নেয়ামত হল আমলকি । যা মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা
রাখে । আমলকি যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা
দিতে পারে । যেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- হাইপার এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে । আপনি যদি অতিরিক্ত এসিডিটিতে ভোগেন, তাহলে আমলকি না খাওয়াই ভালো । কেননা এতে আপনার এসিডিটি আরো বেড়ে যেতে পারে।
- আপনি যদি আমলকি অতিরিক্ত খান ,তাহলে আপনি মোটা হয়ে যেতে পারেন অর্থাৎ ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
- এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে । অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে কি হয়
- হজমের সহায়তা করে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- চুলের জন্য চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- শরীরের অভ্যন্তরে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে
সর্তকতা
- কারো যদি এসিডিটির সমস্যা থাকে তাহলে সকালে খালি পেটে আমলকি না খাওয়াই ভালো।
- সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বমি বমি ভাবও হতে পারে।
- অতিরিক্ত আমল কি খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আপনি যদি পরিমিত পরিমানে আমলকি না খান তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার পূর্বে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমলকি কি সুপার ফুড এর অন্তর্ভুক্ত
এক কথায় উত্তর দিলে বলতে হবে আমলকি সুপার ফুড নয় । কেননা সুপারফুড হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত আছে । যেমন - শরীর গঠন , দেহের ক্ষয় পূরণ, দেহের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করা, দেহে তাপশক্তি উৎপন্ন করা । এই সমস্ত শর্তের মধ্যে আমলকি শুধুমাত্র দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বাকিগুলো করে না । সুতরাং আমলকীকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সুপার ফুড বলা যাবে না ।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি করে আমলকি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী । নিম্নে
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার কিছু উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হল -
- গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ভ্রুণের বিকাশে সাহায্য করে।
- ভ্রুণের সঠিকভাবে বৃদ্ধিতে সহায়তা।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের মানসিক প্রশান্তি আনয়ন করে।
চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার
আমরা প্রতিনিয়ত চুল নিয়ে টেনশানে থাকি । কারো চুল পড়ে যাচ্ছে । কারো চুল মজবুত নয় , কারো চুলের আগা ফেটে যায় ইত্যাদি । এই টেনশনে দূর করার উপায় হল প্রতিদিন একটি করে আমলকী খাওয়া । নিম্নে প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেলে চুলের জন্য কি উপকারিতা হবে তা বলা হল-
- আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- চুলের গোড়া মজবুত করে।
- চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- চুলের খুশকির সমস্যা দূর করে
- চুল পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে
- অল্প বয়সে চুল পাকা প্রতিরোধ করে
ত্বকে আমলকী ব্যবহারের নিয়ম
আমলকি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনগুলি কমাতে সাহায্য করে। আমলকি পেস্ট বা রস করে ত্বকে লাগালে এটি ব্রণ, দাগ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী। এছাড়া, আমলকির রস চুলের জন্যও উপকারী, যা চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
একনজরে আমলকী যে সমস্ত রোগের জন্য উপকারী
- আমলকি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- রক্তের কোলেস্টেরল স্তর কমাতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত আমলকি খেলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
- এতে থাকা পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ব্রংকাইটিস মার জন্য উপকারী
- সর্দি কাশি নিরাময় করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ
আমলকির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপসর্গ কমাতে কার্যকরী। আমলকির রস বা পেস্ট ব্যবহার করে প্রদাহজনিত স্থানগুলিতে লাগালে এটি আরাম দেয় এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
আমলকির বিশেষত্ব
- আমলকিতে রয়েছে পেয়ারার চেয়ে ৩ গুন্ বেশি ভিটামিন সি
- আমলকিতে রয়েছে কাগজী লেবুর চেয়ে ১০ গুন্ বেশি ভিটামিন সি
- আমলকিতে রয়েছে কমলার চেয়ে ১৫-২০ গুন্ বেশি ভিটামিন সি
- আমলকিতে রয়েছে আপেলের চেয়ে ১২০ গুন্ বেশি ভিটামিন সি
মূল কথা
আমলকি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অসংখ্য উপকারিতা প্রদান করে। এর পুষ্টিগুণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি উন্নতি, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সবকিছুতেই আমলকির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত আমলকি খাওয়া এবং এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতা গ্রহণ করা।
ভেনাসম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url