নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা

                   

নিয়মিত  সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমি এই আর্টিকেলে আলোচনা করব।  সূর্যমুখী বীজ শুধু একটি নাস্তা  নয় বরং এটি একটি পুষ্টিকর খাবার ও বটে । বাংলাদেশের ধীরে ধীরে সূর্যমুখী বীজের চাহিদা বাড়ছে । মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কারণে এর মূল্যায়নও  বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই ক্ষুদ্র বীজগুলি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ । 

নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা


এটা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রয়োজন । বর্তমানে বর্তমানে পুষ্টিবিদরা  সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করছে । কেননা এর মধ্যে রয়েছে মনো  ও পলি আনস্যাচুরেটেড  ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নষ্ট করার ক্ষমতা । তাই আমাদের উচিত সূর্যমুখী বীজ নিয়মিত খাওয়া । চলুন  সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা  সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক । 


পোস্ট সূচিপত্র : নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা 

নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা

 নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা  অনেক । সূর্যমুখী বীজ ক্ষুদ্র হলেও এটি অনেক উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন । এই বীজ আমাদের নানাভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে থাকে ।  চলুন এবার আমরা সূর্যমুখী বীজের  উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করি - 

  • সূর্যমুখী বীজ হজমে সহায়তা করে
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
  • সূর্যমুখী বীজ রক্তের শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়
  • সূর্যমুখী ফুল হাড়  মজবুত এবং হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে
  • ওজন কমাতে সূর্যমুখী বীজ অনবদ্য
  • সূর্যমুখী বীজ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
  • এন্টি এজিং হিসেবে সূর্যমুখী বীজ কাজ করে
  • ত্বক জীবাণুমুক্ত করে
  • চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সূর্যমুখী ফুল অতুলনীয়

সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিমান 

খুবই দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুল । আর এর বীজ ক্ষুদ্র হলেও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান।  নিম্নের টেবিলে  এর পুষ্টিমান দেখানো হল - 



উপাদান পরিমাণ
প্রোটিন ২০%
অয়েল /তেল ৩৫-৪২%
অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ৩১%
ভিটামিন এ , বি-৩,৫, ৬ , ই , ফোলেট
খনিজ আয়রন , দস্তা ইত্যাদি

সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম

সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে এর পুষ্টিগুণ সর্বাধিক পাওয়া যায়।
সূর্যমুখী বীজ এটি কাঁচা খেলে স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী । কেননা এতে কোন ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়া সমস্ত পুষ্টি বজায় থাকে । তবে একটু উন্নত স্বাদের করতে হলে হালকা ভেজে সামান্য তেল- লবণ মিশিয়ে খেলেও অনেক মুখরোচক হয় । আর এটি তখন সহজে হজম হয়।
আবার সূর্যমুখী বীজ বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় ।

নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা


প্রতিদিন দুই থেকে তিন চা চামচ সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যায় । যা শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করতে পারে । অনেকে আজকাল এটাকে নাস্তা হিসেবে খায় । অথবা অনেক সময় সালাত বা স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়েও এটি খাওয়া যায় । ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সূর্যমুখী বীজ নিয়মিত খেলে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে লবণ মিশিয়ে না খাওয়াটাই ভাল ।

সূর্যমুখী বীজ কখন এবং কিভাবে খাবেন 

সূর্যমুখী বীজ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী । যদি আমরা এই বীজকে  আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখি তাহলে প্রতিদিনের পুষ্টিগুণ এর দ্বারা পূরণ হওয়া সম্ভব । কিন্তু এই সূর্যমুখী বীজ কখন এবং কিভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় তা বর্ণনা করা  হল । বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এই সূর্যমুখী বীজকে সকালে নাস্তার  সাথে খেতে পারেন । আপনি যদি প্রতিদিন সকালে টক দই বা ওটস  খান তাহলে তার সাথে সামান্য সূর্যমুখী বীজ ছিটিয়ে দিন এবং খাদ্যের সাথে গ্রহণ করুন ।  পাশাপাশি আপনি যখন কোন বাদাম চাই সেটা আখরোট, পেস্তা , কাঠবাদাম , কাজুবাদাম অথবা চিনা বাদাম এর সাথে আপনি সূর্যমুখী বীজ খেতে পারেন। 

সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা

সূর্যমুখী বীজ  আমাদের শরীরের জন্য উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন হলেও এর যথেচ্ছা ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । কেননা প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং মন্দ উভয় দিকই বিদ্যমান থাকে । এখন আমরা সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো -

  • সূর্যমুখী বীজের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। 
  • অনেক সময় সূর্যমুখী বীজের  খোসা হজম করা কঠিন হতে পারে । ফলে মাঝেমধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • এলার্জিজনিত সমস্যা  হতে পারে । কিছু কিছু মানুষের সূর্যমুখী বীজ  খেলে  এলার্জি হতে পারে । এতে করে দেহের বিভিন্ন স্থানে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে। 
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঃ দূষিত বা অঙ্কুরিত  বীজ খেলে সালমোনেলা  নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে । ফলে ব্যাকটেরিয়া জড়িত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম ঃ কিছু সূর্যমুখী বীজ লবণ দিয়ে ভাজা হয় যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 
  • কিডনি বা লিভারের সমস্যা ঃ কিছু কিছু সূর্যমুখীবীজে  ক্যাডমিয়ামের  মত ভারী ধাতু থাকতে পারে।  ফলে বেশি পরিমাণে খেলে কিডনি বা লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
   
নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা


সূর্যমুখী বীজ গ্রহণের সতর্কতা

স্বাস্থ্য এবং তারুণ্য ধরে রাখার অতুলনীয় উপাদান হল সূর্যমুখী বীজ।  কিন্তু কিছু কিছু সময় এটা আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে । তাই এটা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত । তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সূর্যমুখী বীজ গ্রহণের পূর্বে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে ।  অথবা পরিষ্কার করে গ্রহণ করতে হবে ।  বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে অথবা হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের সূর্যমুখী বীজ এড়িয়ে চলাই ভাল । 

 

সূর্যমুখী বীজের নানাবিধ ব্যবহার

সূর্যমুখী বীজ দেশে বিদেশে নানাবিধ ভাবে ব্যবহৃত হয়।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আলোচনা করা হল - 

প্রথমত সূর্যমুখী বীজ হাঁস মুরগির খাদ্য রূপে ব্যবহার করা হয়। 

সূর্যমুখী বীজ তেলের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় । এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়।  তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। 

সূর্যমুখী  বীজের তেলকে ঘি এর বিকল্প হিসেবে মনে করা হয় । যা বনস্পতির নামে পরিচিত। 

বনস্পতি তেল যা সূর্যমুখী বীজ থেকে উৎপন্ন হয়। অন্যান্য রান্নার তেল থেকে অনেক ভালো ।  হৃদরোগেদের জন্য বেশ কার্যকর । এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম । এছাড়া এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। 

মন্তব্য 

নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এই বীজ  আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভেনাসম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url