প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা
প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা অনেক । ইসুবগুলের ভুষি আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত ভেষজ । এটি প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান । যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে । এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, এসিডিটি , হৃদরোগসহ বিভিন্ন ব্যাধির জন্য খুবই উপকারী একটা ভেষজ ।
ইসবগুল গাছ দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা হয় । এর ফল দুই কোষ বিশিষ্ট , ৭- ৮ মিলিমিটার লম্বা হয়। যার ভেতরে তিন মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে । দেখতে অনেকটা নৌকার মতো , খোসা পিচ্ছিল হয় । এর মূল কাজ হচ্ছে শরীরের অভ্যন্তরে অন্ত্রের দেয়াল থেকে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখা।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা
- প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা
- ইসবগুল কি
- ইসবগুলের পুষ্টি উপাদান
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম
- এসিডিটি প্রতিরোধে ইসবগুল
- ওজন কমাতে ইসবগুল
- অর্শ রোগ নিরাময়ে ইসবগুল
- ইসবগুল খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- ইসবগুল সেবনে সতর্কতা/পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লেখকের মন্তব্য
প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা
পুষ্টিবিদরা বলছেন আপনি যদি ইসবগুলের ভুষি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন , তাহলে আপনার শরীরে কয়েকটি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করে ওঠার সুযোগ ঘটে । এবার আসুন কি কি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে বা প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা কি কি চলুন জেনে নেওয়া যাক -
- ইসবগুলের ভুসি মূলত ব্যবহার করা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া শুরু করতে পারেন।
- ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর ইনফেকসান উপশম করে।
- পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে ও হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
- ইসবগুলের ভুসি এর খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
- যাদের অর্শ রোগ রয়েছে তাদের রোগটি নিধনের সাহায্য করে।
- গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটি কমায় ।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায় এবং লিভার পরিষ্কার রাখে।
- শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ইসবগুল কি
ইসবগুলের ভুষি মূলত একপ্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা সাইলিয়াম বীজের খোসা । এর বৈজ্ঞানিক নাম হল প্ল্যানটাগো ওভেটা। ইসবগুল রেচক হিসেবেও পরিচিত। ইসবগুলের ভুষি মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ হার্ট বা হৃৎপিণ্ড , অগ্নাশয় , লিভার সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । এটি গবেষণায় প্রমাণিত।
ইসবগুলের পুষ্টি উপাদান
ইসবগুল মানব দেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর । প্রতিদিন ইসবগুল
খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা জানার পাশাপাশি এর পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে
জানা প্রয়োজন । নিম্নে ইসবগুলের পুষ্টি উপাদান
একটি চার্টে উপস্থাপন করা হলো ঃ
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ৫৩% |
ফ্যাট | ০ |
সোডিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ১৫ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৩০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৯ মিলিগ্রাম |
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম ঃ
ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম ঃ
এসিডিটি প্রতিরোধে ইসবগুল ঃ
যদি কারো বুক জ্বালাপোড়া করে অথবা এসিডিটি বৃদ্ধি পায় তাহলে নিয়ম করে
ইসবগুলের ভুষি সেবন করলে এসিডিটি নিয়ন্ত্রণে আসে । বুক জ্বালাপোড়া থেকে
মুক্তি পাওয়া যায় ।নিয়ম হল-
নিয়ম ঃ প্রতিবার খাবার পরে দুই চা চামচ ইসবগুল আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি পাকস্থলীর অত্যাধিক এসিডিটি উৎপাদন কমাতে সহায়তা করে । ফলে আপনি এসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন। কেননা ইসবগুল পাকস্থলীর দেয়াল টক্সিন মুক্ত রাখে এবং বর্জ্য পদার্থকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে ইসবগুলঃ
অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে ইসবগুল
অর্শ্ব রোগ নিরাময়ের জন্য ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম হলো - দুই চা চামচ ইসবগুল কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিতে হবে। ইসবগুল পায়খানায় পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং নরম করে ফলে টয়লেট করার সময় ব্যাথা লাগে না। পায়খানা নরম হওয়ার কারণে মানুষের বৃহতন্ত্রে চাপ কম করে এবং রক্ত কম যায়।
ইসবগুল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ঃ
আপনি যখন ইসবগুল খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন, চাই সেটা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে হোক অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হোক । এর সঠিক নিয়ম হল , দুই চা চামচ ইসবগুল নিয়ে পানিতে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে । আমাদের অনেকে এটা রাত্রে ভিজিয়ে সকালে খায়। এটাতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । তাই আমাদের এরকম না করা উচিত।
ইসবগুল সেবনে সতর্কতা/পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা যেমন আছে তেমনি এটি অতিরিক্ত গ্রহণে ক্ষতিকর দিকও আছে । নিম্নে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বা এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হল -
- ইসবগুলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে । তবে আপনি যদি অতিরিক্ত ইসবগুল সেবন করেন তাহলে আপনার ক্ষুধা মন্দা বা ডায়েরিয়া দেখা দিতে পারে ।
- ইসবগুল বিভিন্ন ঔষধের কার্য কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে । এই জন্য আপনি যদি কোন ঔষধ গ্রহণ অবস্থায় ইসবগুল খেতে চান তাহলে ওষুধ খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে অথবা দুই ঘন্টা পরে খেতে হবে।
- দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ইসবগুল না খাওয়াটাই ভালো । কেননা দীর্ঘক্ষন ধরে ইসবগুল ভিজিয়ে রাখলে তা ফুলে মোটা ও জমাট যায় । তখন খাওয়ার সময় গলায় অথবা শ্বাসনালীতে ঢুকে বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
- প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা নির্ভর করে এটা গ্রহণ করার নিয়মের উপর বা গ্রহণের পদ্ধতির ওপর। তাই আমাদের সকলেরই সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা অনেক । এটা বলার অপেক্ষা রাখে না । এই আর্টিকেলের মূল কথা হলো প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার উপকারিতা ও কার্যকারিতা পাঠকের সামনে তুলে ধরা এবং সঠিক নিয়ম মেনে ইসুবগুলের ভুষি সেবন করতে উৎসাহিত করা । সুতরাং আমরা এটা কখনোই করব না যে, রাত্রে ঘুমানোর সময় ইসবগুল ভিজিয়ে রাখলাম এবং সকালে উঠে খালি পেটে গ্রহণ করলাম । এতে আমাদের হিতের বিপরীত হতে পারে । এতে বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা সকলেই সতর্ক হই। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
ভেনাসম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url